পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ দুর্নীতি মামলা
পুতুলের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ

প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ভারতে পলাতক শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন। এ আদেশ ২৭ এপ্রিল ২০২৫-এ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দেয়া হয়।
দুদকের আবেদনের শুনানি শেষে আদালত এটি মঞ্জুর করেন, যার ফলে সায়মা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রেফতারি প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
দুদক ও আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুসারে, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এ প্রকল্পে প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠে। এরই ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনা, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ছয়টি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়।
আদালতের পূর্ববর্তী পদক্ষেপ
- ১০ এপ্রিল ২০২৫: প্লট বরাদ্দ দুর্নীতির একটি মামলায় শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন আদালত।
- ১৩ এপ্রিল ২০২৫: পৃথক তিনটি মামলায় শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, টিউলিপ সিদ্দিক, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক এবং সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদসহ মোট ২১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেয়া হয়। এ তিনটি মামলায় ১৬ জন অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি হিসেবে তালিকাভুক্ত।
ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতারি পরোয়ানা
দুদকের সূত্র জানায়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ কারণে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। ইন্টারপোলের মাধ্যমে ‘রেড নোটিশ’ জারি হলে সায়মা ওয়াজেদকে যে দেশেই গ্রেফতার করা হবে, সেখান থেকে তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। আদালতের এ আদেশের ফলে মামলাটি আন্তর্জাতিক মাত্রা পেলো।
মামলার বিবরণ
পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে দায়ের করা ছয়টি মামলায় শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদেরও আসামি করা হয়েছে। দুদকের অভিযোগ, এ প্রকল্পে প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে নিয়ম লঙ্ঘন, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। মামলাগুলোতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ এবং বরাদ্দ প্রক্রিয়ার বিস্তারিত তদন্ত চলমান রয়েছে।
আসামিদের তালিকা
তিনটি মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম:
- শেখ হাসিনা
- সায়মা ওয়াজেদ পুতুল
- শেখ রেহানা
- টিউলিপ সিদ্দিক
- রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক
- আজমিনা সিদ্দিক
- শরীফ আহমেদ (সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী)
এছাড়াও, অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও মামলায় আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত।
দুদকের তদন্ত এবং আদালতের আদেশের পর মামলাগুলো এখন গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর ইন্টারপোলের সম্পৃক্ততা মামলার গতি বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, আসামিদের বর্তমান অবস্থান এবং গ্রেফতার প্রক্রিয়ার অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এখনো প্রকাশিত হয়নি।
সবার দেশ/কেএম