Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:১৭, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

সোনা কেলেঙ্কারি: রান্যা রাওর জামিন স্থগিত

সোনা কেলেঙ্কারি: রান্যা রাওর জামিন স্থগিত
ছবি: সংগৃহীত

কন্নড় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রান্যা রাও স্বর্ণ পাচার মামলায় গ্রেফতারের পর বর্তমানে বেঙ্গালুরু কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রয়েছেন। 

চলতি বছরের ৩ মার্চ বেঙ্গালুরুর কেম্পেগৌড়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুবাই থেকে ফেরার সময় তাকে ১৪.২ কেজি সোনাসহ গ্রেফতার করে রাজস্ব গোয়েন্দা অধিদফতর (ডিআরআই)। এ সোনার মূল্য প্রায় ১২.৫৬ কোটি রুপি। পরবর্তীতে তার বাসভবন থেকে ২.৬৭ কোটি রুপি নগদ এবং ২.০৬ কোটি রুপি মূল্যের সোনার গহনা উদ্ধার হয়, যার কোনো বৈধ উৎস বা রসিদ তিনি দেখাতে পারেননি।

রান্যা রাওয়ের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিদেশি মুদ্রা সংরক্ষণ ও চোরাচালান প্রতিরোধ আইনের (Conservation of Foreign Exchange and Prevention of Smuggling Activities Act) অধীনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ আইনের কঠোর বিধানের কারণে তিনি আগামী এক বছরের মধ্যে জামিন পাওয়ার সুযোগ পাবেন না।

তদন্তে জানা গেছে, রান্যা গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে দুবাই থেকে সোনা কিনেছিলেন এবং ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি সোনা নিয়ে জেনেভায় যাবেন। কিন্তু তিনি সে সোনা নিয়ে ভারতে ফিরেছিলেন।

তিনি হাওয়ালা চক্রের মাধ্যমে অবৈধ লেনদেনে জড়িত ছিলেন। তদন্তে প্রকাশ, স্বর্ণ ব্যবসায়ী সাহিল সাকারিয়া জৈনের সহায়তায় রান্যা ৪৯.৬ কেজি সোনা বিক্রি করেন এবং ৩৮.৪ কোটি রুপি হাওয়ালার মাধ্যমে দুবাইয়ে স্থানান্তর করেন।

এ মামলায় রান্যা ছাড়াও তরুণ রাজু এবং সাহিল সাকারিয়া জৈনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তারাও বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। 

তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে ডিআরআই, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এবং কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই)। সিবিআই সরকারি কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।

রান্যা দাবি করেছেন, তিনি ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে জোরপূর্বক সোনা পাচারে জড়িয়েছিলেন। তবে তদন্তকারীরা তার এ দাবি যাচাই করছে।

কর্ণাটক সরকার এ মামলায় রান্যার সৎপিতা, জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা রামচন্দ্র রাওয়ের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করেছিলো। দলটি ইতিমধ্যে তাদের প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিয়েছে।

এ ঘটনা কর্ণাটকে রাজনৈতিক তরজার সৃষ্টি করেছে। বিজেপি অভিযোগ করেছে, সিদ্দারামাইয়ার নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের দুই মন্ত্রীর সঙ্গে রান্যার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিলো। পাল্টা কংগ্রেস দাবি করেছে, ২০২৩ সালে বিজেপি সরকারের আমলে রান্যার কোম্পানিকে একটি ইস্পাত কারখানার জন্য ১২ একর জমি বরাদ্দ করা হয়েছিলো।

রান্যা এবং তার ভাই ঋষভের মালিকানাধীন ক্ষীরদা প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি ১৩৮ কোটি রুপি বিনিয়োগে ইস্পাত কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিল।

রান্যাকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখা হয়েছিলো। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালের আইন প্রয়োগের ফলে তার জামিনের সম্ভাবনা কমে গেছে।

আদালতে রান্যা কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং দাবি করেন, হেফাজতে তার সঙ্গে অশোভন আচরণ করা হয়েছে। তবে আদালত তার জামিন আবেদন স্থগিত রেখেছে।

 

তিনি প্রতিদিন ৩০ মিনিট তার আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পেয়েছেন।

রান্যা রাও ‘মাণিক্য’ (২০১৪), ‘ওয়াঘা’ (২০১৬) এবং ‘পটাকি’ (২০১৭) সহ বেশ কয়েকটি কন্নড় ও তামিল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

তিনি ১৫ দিনের মধ্যে চারবার দুবাই ভ্রমণ করেছিলেন, যা তদন্তকারীদের সন্দেহের কারণ হয়। প্রতি ভ্রমণে তিনি প্রায় ১২-১৩ লক্ষ রুপি আয় করতেন।

ডিআরআই এবং সিবিআই এ মামলায় হাওয়ালা চক্র এবং সম্ভাব্য রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংশ্লিষ্টতার গভীর তদন্ত করছে।

মামলায় উদ্ধার হওয়া মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৭.২৯ কোটি রুপি।

এ মামলা ভারতে স্বর্ণ পাচার ও হাওয়ালা লেনদেনের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থার উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তদন্তের অগ্রগতির ওপর নির্ভর করবে এ মামলার চূড়ান্ত ফলাফল।

সবার দেশ/কেএম
 

সম্পর্কিত বিষয়: