Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:৩৮, ১৪ এপ্রিল ২০২৫

নিয়মভঙ্গে জরিমানা ও কারাদণ্ডের হুঁশিয়ারি

যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ দিনের বেশি থাকলে বাধ্যতামূলক নিবন্ধন

যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ দিনের বেশি থাকলে বাধ্যতামূলক নিবন্ধন
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ দিনের বেশি সময় অবস্থানকারী সকল বিদেশি নাগরিককে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে নিবন্ধন করার জন্য বাধ্যতামূলক নির্দেশ জারি করেছে মার্কিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি- DHS)। নিবন্ধন না করলে আর্থিক জরিমানা, কারাদণ্ড এবং এমনকি দেশ থেকে বহিষ্কারের মতো কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে। 

এ নিয়ম ১৯৪০ সালের অ্যালিয়েন রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্ট (INA)-এর ধারা ২৬২-এর অধীনে কার্যকর করা হচ্ছে।

মার্কিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা

মার্কিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গত ১১ এপ্রিল এক্স-এ পোস্ট করে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ দিনের বেশি সময় ধরে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিকদের অবশ্যই ফেডারেল সরকারের কাছে নিবন্ধন করতে হবে। এ নিবন্ধন ব্যর্থ হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে, যার ফলে জরিমানা এবং কারাদণ্ডের শাস্তি ভোগ করতে হবে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েমের বরাত দিয়ে পোস্টে আরও বলা হয়, অবৈধ অভিবাসীদের প্রতি আমাদের বার্তা স্পষ্ট: এখনই যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করুন এবং স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরে যান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ নিয়ম জাতীয় নিরাপত্তা ও আমেরিকান নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে।

নিবন্ধনের বিস্তারিত

২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জারি করা এক্সিকিউটিভ অর্ডার ১৪১৫৯, ‘প্রোটেক্টিং দ্য আমেরিকান পিপল এগেইনস্ট ইনভেশন’ অনুযায়ী, ১৪ বছর বা তার বেশি বয়সী সকল বিদেশি নাগরিক, যারা ভিসা আবেদনের সময় নিবন্ধিত বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেননি এবং ৩০ দিনের বেশি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন, তাদের নিবন্ধন করতে হবে। এছাড়া, ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে তাদের পিতামাতা বা আইনি অভিভাবকদের নিবন্ধন নিশ্চিত করতে হবে। ১৪ বছর পূর্ণ হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে পুনরায় নিবন্ধন এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট জমা দিতে হবে।

নিবন্ধনের জন্য ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (USCIS)-এর ওয়েবসাইটে একটি অনলাইন অ্যাকাউন্ট খুলে ফর্ম G-325R, বায়োমেট্রিক ইনফরমেশন (রেজিস্ট্রেশন) পূরণ করতে হবে। এ ফর্মে ব্যক্তিগত তথ্য, ঠিকানা, অভিবাসন স্ট্যাটাস এবং অন্যান্য বিবরণ দিতে হবে। নিবন্ধনের পর বায়োমেট্রিক ডেটা (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) জমা দিতে USCIS-এর অ্যাপ্লিকেশন সাপোর্ট সেন্টারে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে।

শাস্তি ও জরিমানা

নিবন্ধন না করার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর। মার্কিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে:

  • নিবন্ধন ব্যর্থতা: ইচ্ছাকৃতভাবে নিবন্ধন না করলে এটি মিসডিমিনার অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ ৫,০০০ ডলার জরিমানা, ৬ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা উভয়ই হতে পারে।
  • নিবন্ধনের প্রমাণ বহন না করা: ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তিদের সবসময় নিবন্ধনের প্রমাণপত্র (যেমন, ফর্ম I-94, গ্রিন কার্ড, বা অন্যান্য নথি) সঙ্গে রাখতে হবে। না রাখলে ৫,০০০ ডলার জরিমানা বা ৩০ দিনের কারাদণ্ড হতে পারে।
  • ঠিকানা পরিবর্তনের তথ্য না দেয়া: নিবন্ধিত বিদেশিদের ঠিকানা পরিবর্তনের ১০ দিনের মধ্যে USCIS-কে জানাতে হবে। ফর্ম AR-11 এর মাধ্যমে এ তথ্য জমা দিতে হবে। এটি না মানলে ৫,০০০ ডলার জরিমানা, ৩০ দিনের কারাদণ্ড এবং সম্ভাব্য বহিষ্কারের মুখোমুখি হতে হবে।

অবৈধ অভিবাসীদের জন্য হুঁশিয়ারি

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পোস্টে বলা হয়েছে, অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • তাৎক্ষণিক বহিষ্কার: কোনো সুযোগ না দিয়ে অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
  • দৈনিক জরিমানা: দেশ ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হলে না ছাড়লে প্রতিদিন ৯৯৮ ডলার জরিমানা গুনতে হবে।
  • স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা: বহিষ্কৃত অভিবাসীরা ভবিষ্যতে বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ হারাবেন।

তবে, স্বেচ্ছায় দেশ ত্যাগের ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। যেমন:

  • নিজের পছন্দমতো ফ্লাইট বেছে নেয়ার সুযোগ।
  • যুক্তরাষ্ট্রে অর্জিত অর্থ সঙ্গে নেয়ার অনুমতি।
  • আর্থিক সমস্যা থাকলে বিমান ভাড়ায় ভর্তুকি।
  • ভবিষ্যতে বৈধভাবে ফিরে আসার সম্ভাবনা।

কারা নিবন্ধন থেকে অব্যাহতি পাবেন?

কিছু ক্ষেত্রে বিদেশি নাগরিকরা নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি পাবেন। যেমন:

  • যারা ভিসা আবেদনের সময় নিবন্ধিত হয়েছেন এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়েছেন।
  • ফর্ম I-94, গ্রিন কার্ড, বা এমপ্লয়মেন্ট অথরাইজেশন ডকুমেন্টধারীরা।
  • A এবং G ভিসাধারী কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তারা।
  • ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রামের অধীনে স্বল্প সময়ের জন্য আগতরা।

তবে, যারা অবৈধভাবে প্রবেশ করেছেন, যেমন সীমান্ত অতিক্রম করে বা পরিদর্শন ছাড়া প্রবেশকারীরা, তাদের অবশ্যই নিবন্ধন করতে হবে। কানাডিয়ান দর্শনার্থীরা, যারা স্থলপথে প্রবেশ করে ফর্ম I-94 পাননি এবং ৩০ দিনের বেশি থাকবেন, তাদেরও নিবন্ধন করতে হবে।

প্রভাব ও সমালোচনা

এ নিয়মকে কেন্দ্র করে অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। আইনজীবী ও অভিবাসী অধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এ নিয়ম বিশেষ করে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। নিবন্ধনের মাধ্যমে তারা নিজেদের তথ্য প্রকাশ করলে বহিষ্কারের ঝুঁকি বাড়বে। এছাড়া, নিয়মটি সঠিকভাবে বোঝানোর অভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।

অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, এ নিবন্ধন ব্যবস্থা জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করবে এবং অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে। DHS-এর হিসেবে, এ নিয়মে ২.২ থেকে ৩.২ মিলিয়ন বিদেশি নাগরিক প্রভাবিত হতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিবন্ধন নিয়ম অভিবাসন নীতিতে কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিদেশি নাগরিকদের এখন থেকে নিয়ম মেনে নিবন্ধন করা এবং প্রমাণপত্র সঙ্গে রাখা বাধ্যতামূলক। অবৈধ অভিবাসীদের জন্য স্বেচ্ছায় দেশ ত্যাগের সুযোগ থাকলেও, নিয়ম না মানলে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। এ পরিবেশে অভিবাসীদের সঠিক তথ্য সংগ্রহ এবং আইনি পরামর্শ নেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

সবার দেশ/এমকেজে