রিখটার স্কেলে মাত্রা ৬.২, আতঙ্কে রাস্তায় মানুষ
ভূমিকম্পে কাঁপলো ইস্তাম্বুল

তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলে বুধবার (২৩ এপ্রিল) দুপুর ১২:৪৯ মিনিটে (স্থানীয় সময়) ৬.২ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে।
দেশটির দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এএফএডি) জানায়, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল ইস্তাম্বুল থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার পশ্চিমে সিলিভরি এলাকায়, মারমারা সাগরে, এবং এর গভীরতা ছিল ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৬.৯২ কিলোমিটার।
ভূমিকম্পের তীব্রতায় বসফরাস প্রণালীর ইউরোপীয় ও এশীয় তীরে অবস্থিত এই শহরের ১৬ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বাসিন্দারা ভবন ছেড়ে রাস্তায়, পার্কে এবং দোরগোড়ায় আশ্রয় নেন। তাৎক্ষণিকভাবে কোনো বড় ক্ষয়ক্ষতির খবর না পাওয়া গেলেও সম্প্রচারমাধ্যম টিজিআরটি জানায়, ভূমিকম্পের সময় একটি ভবনের বারান্দা থেকে লাফিয়ে একজন আহত হয়েছেন।
এএফএডি জানায়, প্রাথমিক ভূমিকম্পের পর ৪.৪ থেকে ৪.৯ মাত্রার তিনটি পরাঘাত (আফটারশক) অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের প্রভাব ইস্তাম্বুলের পার্শ্ববর্তী প্রদেশ এবং এমনকি ইজমির শহরে (৫৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে) পর্যন্ত অনুভূত হয়।
তুরস্কের পরিবহনমন্ত্রী আবদুলকাদির উরালোগলু জানান, মহাসড়ক, বিমানবন্দর, রেলপথ এবং মেট্রোতে প্রাথমিক পরিদর্শনে কোনো ক্ষতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে, কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোতে প্রবেশ না করার জন্য সতর্কতা জারি করেছে।
তুরস্ক উত্তর ও পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্টসহ দুটি প্রধান ফল্ট লাইনের উপর অবস্থিত, যে কারণে দেশটিতে ভূমিকম্প ঘন ঘন ঘটে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৭.৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে দক্ষিণ তুরস্কে ৫৩,০০০ এবং সিরিয়ায় ৬,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়, যা ইস্তাম্বুলবাসীর মনে এখনো তাজা।
ইস্তাম্বুলের কুচুকচেকমেচে জেলার মেয়র কেমাল সেবি জানান, এখনও কোনো বড় ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি, তবে এলাকার ঘনবসতি এবং পুরোনো ভবনগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ভূমিকম্পের সময় জাতীয় ছুটির দিনে অনেকে বাইরে ছিলেন, যা সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সাহায্য করেছে।
জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সেস (জিএফজেড) জানায়, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিলো ৬.০২ এবং গভীরতা ১০ কিলোমিটার। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে দেখা গেছে, ভূমিকম্পের সময় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে রাস্তায় ছুটে আসেন এবং অনেকে ফোনের মাধ্যমে প্রিয়জনের খোঁজ নেন।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়েরলিকায়া জানান, এএফএডি এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়নের জন্য মাঠে কাজ শুরু করেছে।
ইস্তাম্বুল উত্তর আনাতোলিয়ান ফল্টের কাছাকাছি অবস্থিত, যা শহরটিকে ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন যে, ইস্তাম্বুলে একটি বড় মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে, যা শহরের পুরোনো অবকাঠামো এবং ঘনবসতির কারণে বিপর্যয়কর হতে পারে। ১৯৯৯ সালের ইজমিত ভূমিকম্পে (৭.৬ মাত্রা) ১৭,০০০ মানুষের মৃত্যু এবং ২০২৩ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্প ইস্তাম্বুলের বাসিন্দাদের মনে ভীতি সঞ্চার করেছে। বর্তমান ভূমিকম্প বড় ধরনের ক্ষতি না করলেও, এটি শহরের ভূমিকম্প প্রস্তুতি এবং ভবনের নিরাপত্তা মানদণ্ডের উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা পুনরায় তুলে ধরেছে।
সবার দেশ/কেএম