রাখাইনে ‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে এখনও আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য কক্সবাজার হয়ে প্রস্তাবিত ‘মানবিক করিডোর’ স্থাপনের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে কোনও আলোচনা করেনি। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল ২০২৫) বার্তা সংস্থা ইউএনবি-কে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় এ বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন।
তিনি বলেন, সরকার এ বিষয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কারও সঙ্গে আলোচনা করেনি। এটা আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই।
তবে, শফিকুল আলম জানান, জাতিসংঘের নেতৃত্বে রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠানোর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে বাংলাদেশ লজিস্টিক সহায়তা প্রদানের জন্য প্রস্তুত। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ সবসময় দুর্যোগকবলিত দেশগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর বাংলাদেশ তাৎক্ষণিক সহায়তা পাঠিয়েছে, যা এ প্রতিশ্রুতির প্রমাণ।
প্রেস সচিব শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, রাখাইনে চলমান সংকট দীর্ঘায়িত হলে নতুন করে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে পারে, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, জাতিসংঘের সহায়তায় পরিচালিত মানবিক তৎপরতা রাখাইনে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করবে।
শফিকুল আলম বর্তমান বাস্তবতায় রাখাইনে ত্রাণ পাঠানোর একমাত্র কার্যকর পথ হিসেবে বাংলাদেশের মাধ্যমে সরবরাহের বিষয়টি উল্লেখ করেন। তবে, তিনি স্পষ্ট করেন যে এ বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সি দ্ধান্ত নেয়া হয়নি। সরকার সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে এবং উপযুক্ত সময়ে দেশের অভ্যন্তরীণ অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করবে।
সম্প্রতি রাখাইন বা মানবিক করিডোর ইস্যুতে বড় শক্তিগুলোর জড়িত থাকার গুজব ছড়িয়েছে। এ বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, এসব পুরোপুরি ভিত্তিহীন এবং প্রোপাগান্ডা। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এ গুজব সেগুলো থেকে আলাদা নয়।
প্রেক্ষাপট:
রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাত এবং অর্থনৈতিক অবনতির কারণে মানবিক সংকট তীব্র হয়েছে। জাতিসংঘ গত বছরের অক্টোবরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, রাখাইনে পণ্য প্রবেশের সীমান্ত বন্ধ, আয়ের উৎসের অভাব, মূল্যস্ফীতি এবং খাদ্য উৎপাদনে ধসের কারণে মার্চ বা এপ্রিল ২০২৫-এর মধ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। এ সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘ বাংলাদেশের মাধ্যমে ত্রাণ পাঠানোর সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে।
বাংলাদেশের অবস্থান:
প্রেস সচিবের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, বাংলাদেশ মানবিক সহায়তায় সহযোগিতার বিষয়ে উন্মুক্ত, তবে এটি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে এবং নির্দিষ্ট শর্তের ভিত্তিতে হতে হবে। সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নতুন করে অনুপ্রবেশের ঝুঁকি এড়াতে সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করেছে। এছাড়া, মানবিক করিডোর স্থাপনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং অঞ্চলটির জটিল ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখা হচ্ছে।
উদ্বেগ ও সম্ভাবনা:
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, মানবিক করিডোর ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, কারণ এটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী বা অপরাধীদের দ্বারা অপব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে এ করিডোর রাখাইনে স্থিতিশীলতা আনতে এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক হতে পারে।
বাংলাদেশ সরকারের এ সতর্ক অবস্থান দেশের নিরাপত্তা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং মানবিক দায়বদ্ধতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার প্রচেষ্টাকে প্রতিফলিত করে।
সবার দেশ/কেএম