Header Advertisement

Sobar Desh | সবার দেশ আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৯:৩৫, ২৮ মার্চ ২০২৫

মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্প

জুমার নামাজে মসজিদ ধসে নিহত ২০

জুমার নামাজে মসজিদ ধসে নিহত ২০
ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারে শুক্রবার (২৮ মার্চ) ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, মিয়ানমারের মান্দালয় অঞ্চলের শোয়ে ফো শিং মসজিদে জুমার নামাজের সময় ভূমিকম্পে মসজিদটি ধসে পড়ে, যেখানে কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও অনেকে আটকা পড়েছেন, এবং মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

একজন স্বেচ্ছাসেবক স্থানীয় সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, আমরা যখন নামাজ পড়ছিলাম, তখন মসজিদটি ধসে পড়ে। প্রায় তিনটি মসজিদ ধসে পড়েছে, এবং সেখানে অনেক মানুষ আটকা পড়েছে। এখন পর্যন্ত ২০ জন মারা গেছেন, তবে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

স্থানীয় ইলেভেন মিডিয়া গ্রুপের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মসজিদ ছাড়াও মিয়ানমারের বিভিন্ন স্থানে বৌদ্ধ মন্দির এবং অন্যান্য ধর্মীয় স্থাপনাও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাউঙ্গু শহরে একটি মঠ ধসে পড়েছে, এবং সেখানে পাঁচজন বাস্তুচ্যুত শিশু প্রাণ হারিয়েছে। এটি মিয়ানমারে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, যেখানে ধর্মীয় স্থাপনার পাশাপাশি মানুষের জীবনও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিন সকাল ১২টা ২১ মিনিটে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। ১২ মিনিট পর ৬ দশমিক ৪ মাত্রার একটি আফটারশক অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের পরবর্তী প্রভাব মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে অনুভূত হয়েছে, যার ফলে অন্তত ২৮ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

মিয়ানমারে ভূমিকম্পের সময় মান্দালয়ের ঐতিহাসিক আভা সেতুটি ভেঙে পড়েছে। এর পাশাপাশি ঐতিহাসিক মান্দালয় প্রাসাদও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঐতিহাসিক স্থানগুলো ভেঙে পড়া মিয়ানমারের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য এক বড় আঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

মিয়ানমারের রাষ্ট্র পরিচালিত এমআরটিভি জানায়, ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির কারণে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি সাগাইং অঞ্চল, মান্দালয় অঞ্চল, ম্যাগওয়ে অঞ্চল, শান রাজ্য, নেপিদো কাউন্সিল এলাকা এবং বাগো অঞ্চলের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।

এমআরটিভি আরও জানিয়েছে, মিয়ানমারের জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শন করতে ভূমিকম্প-কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং ধসে পড়া ভবনে আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধার করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি এ মুহূর্তে দেশটির অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন অব্যাহত রেখেছেন।

রাজধানী নেপিদোসহ অন্যান্য এলাকার হাসপাতালে অনেক আহতের খবর পাওয়া গেছে। সাগাইং, মান্দালয় এবং নেপিদো অঞ্চলের সরকারি হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, এবং সেখানে রক্তের তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়েছে। চিকিৎসকদের জরুরি সহায়তার প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

মিয়ানমারে ভূমিকম্পে সরকারি মন্ত্রণালয়গুলোর ভবনও ধসে পড়েছে, যার মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ও রয়েছে। এর ফলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শিশু জরুরি তহবিল (UNICEF) এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত শিশু এবং তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তারা আরও জানিয়েছে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে আমরা প্রভাব মূল্যায়ন করতে এবং তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদানের জন্য অংশীদারদের সাথে কাজ করছি।

এছাড়া, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দেশগুলো মিয়ানমারের ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার ও সহায়তা কার্যক্রমে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

এটি মিয়ানমারের জন্য এক ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যেখানে বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের দ্রুত প্রতিক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন। এটি আরও প্রমাণ করেছে যে, ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রস্তুতির গুরুত্ব কতটা অপরিহার্য।

সবার দেশ/কেএম